চায়ের উপকারিতা
চায়ের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনেসিস (Camellia sinensis)। এটিতে অনেক ঔষধি উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সার, হৃদরোগ, বাত এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে
১. ক্যান্সার প্রতিরোধ
আশ্চর্যজনকভাবে, চা ক্যান্সারের মত জটিল রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। আসলে, চায়ে পলিফেনল যৌগের মতো কিছু ম্যাজিক উপাদান পাওয়া যায়, যা টিউমার কোষগুলিকে পার্শ্ববর্তী অংশে ছড়িয়ে পড়তে বাধা দেয় এবং কোষের সঠিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি গবেষণা এনসিবিআইয়ের ওয়েবসাইটে (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজিক ইনফরমেশন) পাওয়া যায়। তাদের মতে, গ্রিন টি ডিটোক্সিফিকেশন এনজাইমগুলি যেমন গ্লুটাথাইনের এস-ট্রান্সফেরেজ এবং কুইনন রিডাক্টেসকে সক্রিয় করতে পারে, যা টিউমারগুলি বৃদ্ধি পেতে রোধ করতে পারে। এছাড়াও, গ্রিন টি এবং ব্ল্যাক টিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ফ্ল্যাওনয়েডস (অ্যাপিকেচিন, এপিগেলোটেকিন, এপিকেটচিন গ্যালেট) – এর কেমোপ্রেনভেটিভ বা অ্যান্টিক্যান্সার প্রভাবগুলি ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে। মনে রাখবেন, ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ। তাই, এর চিকিৎসার জন্য শুধু ঘরোয়া প্রতিকারের উপর নির্ভর করে থাকবেন না। ঘরোয়া প্রতিকারের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।
২. হৃদরোগ প্রতিরোধ
হৃৎপিন্ডকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত সুষম পরিমাণ গ্রিন টি বা ব্ল্যাক টি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেক বিশেষজ্ঞরা। নিয়মিত চা খাওয়ার অভ্যাস রক্তে শর্করার পরিমাণ, রক্তচাপ, লিপিড কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণে রাখে। চা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। তবে এই মুহুর্তে, হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধে চায়ের ভূমিকা নিয়ে আরও বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রয়োজন।
৩. বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণ
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির জয়েন্টগুলিতে ব্যথা, কড়া এবং ফোলাভাব অব্যাহত থাকে। গ্রিন টি এই সমস্যাটিতে সাময়িক আরাম দিতে পারে। এনসিবিআই-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে গ্রিন টি এবং ব্ল্যাক টিতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা বাতের ঝুঁকি এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং, গ্রিন টিকে বাতের ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে মেনে নেওয়া যেতে পারে। তবে এটি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
৪. ডায়াবেটিস কমাতে
এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চায়ের বিভিন্ন উপকারি বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে চা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। গবেষণা অনুসারে, চা ইনসুলিনের সক্রিয়তা বাড়ায় যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এই ভিত্তিতে, কেউ বলতে পারেন যে চা খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। গ্রিন টি আর লিকার চা-ই সবথেকে বেশী উপকারী।
৫. মাথা ব্যাথা কমাতে
এক কাপ চা ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি মাথা ব্যাথাও কমিয়ে দিতে পারে ম্যাজিকের মত। আসলে, এতে ক্যাফিন সামগ্রী রয়েছে, যা মাথা ব্যাথার প্রভাবকে হ্রাস করতে পারে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, ২৩৭ মিলিগ্রাম ব্ল্যাক টিতে প্রায় ৩০-৮০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন থাকে। একই সাথে, ৩৫-৬০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন সামগ্রী ২৩৭ মিলি গ্রিন টি তে ও পাওয়া যায়। তবে মনে রাখবেন যে ক্যাফিন মাথা ব্যথার প্রতিকার নয়। বিভিন্ন কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে। ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী এবং অত্যন্ত বেশী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
উল্লেখ্য, একজন সুস্থ ব্যক্তি প্রতিদিন ৪০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যাফিন গ্রহণ করতে পারেন। তবে এর থেকে বেশী মাত্রায় ক্যাফিন উপাদান শরীরে প্রবেশ করলে তা মাথাব্যথা, অনিদ্রা এবং অস্থিরতার মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
৬. অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ
এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিশ্চিত করে যে ত্বকের বর্ধমান বয়সের প্রভাব হ্রাস করতেও উপকারী চা। গবেষণা থেকে জানা যায় যে সবুজ এবং সাদা চাতে পলিফেনলস (ক্যাটচিন) নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে যা ত্বকের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। সাদা চা ক্যামেলিয়া সাইনেসিস নামক একটি গাছের না ফোটা কুঁড়ি এবং পাতার ওপর থাকা রূপোলী রঙের আঁশ থেকে তৈরী করা হয়। এগুলিকে সূর্যের তাপে শুকিয়ে বিবর্ণ করা হয়। হোয়াইট-টি’ তে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখে। আবার, ব্ল্যাক টি তে থিওফ্লাভিন নামক উপাদান রয়েছে যা ত্বককে উজ্জ্বল ও টানটান রাখতে সাহায্য করে এবং সহজে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। এই উপাদানগুলি ত্বকে বলিরেখা বা রিংকেলস পড়তে দেয় না, কোঁচকানো ভাব দূর করে। চা খাওয়ার পাশাপাশি চা পাতা দিয়ে বিভিন্ন রকমের ফেস প্যাক বা ফেস মাস্ক বানিয়ে তা ত্বকে প্রয়োগ করতে পারেন, এতে আরোও বেশী তাড়াতাড়ি উপকার পাবেন।
৭. চায়ের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট উপাদানের উপকারিতা
চায়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, যা দেহে ফ্রি র্যাডিক্যালসের প্রভাব হ্রাস করতে সাহায্য করে। এ কারণে হৃদরোগ, ক্যান্সার, বার্ধক্যজনিত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে হ্রাস করা যায়। অতএব, নিজের রোগ মুক্ত রাখতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ খাওয়ারের পাশাপাশি নিয়মিত চা পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৮. অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য
প্রদাহজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত চা খেতে পারেন। আসলে, কালো লিকার চা বা গ্রিন টি সব রকম চা পাতাতেই অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা প্রদাহ থেকে মুক্তি দিতে পারে।